মূল বিষয়ে যান

প্রফেসর শঙ্কুর জীবনবৃত্তান্ত

7 মিনিট

একনজরে প্রফেসর শঙ্কু: #

প্রফেসর শঙ্কু

  • শঙ্কু চরিত্র টির সৃষ্টি হয় ১৯৬১ খ্রিস্টাব্দে ।
  • শঙ্কু চরিত্র টির সৃষ্টি কর্তা সত্যজিৎ রায় ।
  • বৈজ্ঞানিক ও আবিস্কারক হিসেবে পরিচিত।

বংশ পরিচয়:

  • পুরো নাম :- ত্রিলোকেশ্বর শঙ্কু ।
  • জন্মদিন :- ১৬ ই জুন ।
  • পিতার নাম :- ত্রিপুরেশ্বর শঙ্কু ।
  • পিতামহের নাম :- বটুকেশ্বর শঙ্কু ।
  • পিতা পেশায় ছিলেন গিরিডির আয়ুর্বেদিক চিকিৎসক ।

শঙ্কুর ছাত্রজীবন ও কর্ম জীবন:

  • বারো বছর বয়সে ম্যাট্রিক পাশ।
  • ষোলো বছর বয়সে পদার্থবিদ্যা ও রসায়ন শাস্ত্রে স্নাতক হন স্কটিশ চার্চ কলেজ থেকে ।
  • কুড়ি বছর বয়সে স্কটিশ চার্চ কলেজের পদার্থ বিদ্যার অধ্যাপক হন ।

শখ:

  1. প্রফেসর শঙ্কুর শখ ছিল ডায়েরি লেখা ।

শঙ্কুর সর্বসময়ের সঙ্গী:

  1. প্রহ্লাদ (শঙ্কুর ভৃত্য)
  2. নিউটন (পোষা বিড়াল)
  3. বিধুশেখর (রোবট)

বিদেশী বন্ধু:

  1. সন্ডার্স (ইংরেজ বিজ্ঞানী)
  2. ক্রোল (জার্মান বিজ্ঞানী)
  3. সমারভিল (ইংরেজ বিজ্ঞানী)
  4. অ্যাকরয়েড (ইংরেজ প্রাণীতত্ত্ববিদ)

পুরস্কার:

  1. সুইডিশ একাদেমি অব সায়েন্স থেকে ড. উপাধি পান প্রফেসর শঙ্কু ।
  • শঙ্কু চিরকুমার।

  • প্রতিবেশী বিজ্ঞান-বিমুখ অবিনাশবাবু

বিস্তারিত #

আগাগোড়া খাঁটি বাঙালি প্রফেসর শঙ্কুর ডায়ারি থেকে জানা যায় গিরিডির অপ্রতিদ্বন্দ্বী এক ধন্বন্তরি চিকিৎসক ত্রিপুরেশ্বর শঙ্কুর একমাত্র সন্তান তিনি। পিতামহ বটুকেশ্বর ছিলেন তান্ত্রিক। ছোটোবেলা থেকেই শঙ্কুকে বাবা শিখিয়েছিলেন জীবনযাপনের জন্য অর্থের প্রয়োজন ঠিকই, কিন্তু জীবনে শান্তির জন্য কেবলমাত্র টাকার পিছনে ছুটলে চলে না। দুস্থ দরিদ্র মানুষের কষ্ট লাঘব করার জন্য যদি কিছু করা যায় তবেই জীবন সার্থক হয়। সারাজীবন এই বিশ্ববিখ্যাত বিজ্ঞানী তাঁর কথা মনে রেখেছিলেন।

গিরিডির ইস্কুল থেকে অসম্ভব ব্রিলিয়ান্ট ছাত্র শঙ্কু ১২ বছর বয়সে ম্যাট্রিক পাশ করেন এবং কলকাতায় এসে স্কটিশ চার্চ কলেজ থেকে ১৬ বছর বয়সে পদার্থবিদ্যা ও রসায়ন-এ অনার্স নিয়ে স্নাতক হন, পরীক্ষার পাট চুকিয়ে গিরিডিতে ফিরে এসে বাবার পরামর্শে শিল্প, সাহিত্য, ইতিহাস, দর্শন নিয়ে পড়াশোনা করেন। ২০ বছর বয়সে স্কটিশ চার্চ কলেজে পদার্থবিদ্যার অধ্যাপনার কাজ নেন। তার কিছুদিন পর থেকে এই অধ্যাপকের জীবন নানা বিচিত্র পথে চলতে শুরু করে। পিতার মৃত্যু হয় এবং তাঁর কাছে শোনা স্বর্ণপর্ণীর নামে এক বিশেষ গাছরার সন্ধানে তিনি কসৌলি যান। স্বর্ণপর্ণীর উল্লেখ চরক সংহিতাতেও ছিল। এই গাছ থেকেই শঙ্কু তৈরি করেন সর্বরোগহর বড়ি ‘মিরাকিউরল’।

এই সময়ে তার সঙ্গে পরিচয় হয় লন্ডনের জীবতত্ত্ব বিষয়ক বিজ্ঞানী জেরেমি সন্ডার্স এবং যকৃৎ ক্যানসারে আক্রান্ত সন্ডার্সকে মিরাকিউরল-এর সাহায্যে শঙ্কু সারিয়ে তোলেন। এরপর বিভিন্ন সময়ে নানান অভিযানে জেরেমি সন্ডার্স শঙ্কুর সঙ্গে থেকেছেন। সন্ডার্স এবং তার স্ত্রী ডরোথির উৎসাহে শঙ্কু প্রথম লন্ডনের বিজ্ঞানী মহলে পরিচিত হন। মিরাকিউরল- এর পরে শঙ্কুর আবিষ্কার অ্যানাইহিলিন পিস্তল। রক্তপাত সহ্য করতে পারেন না অথচ আত্মরক্ষা করা প্রয়োজন তাই এই অস্ত্রের প্রয়োজন হয় যা বিনা রক্তপাতে মানুষকে অদৃশ্য করে দেয়। লুপ্ত স্মৃতি ফিরিয়ে আনার জন্য রিমেমব্রেন ঘুমের অব্যর্থ বড়ি সনমোলিন চিকিৎসাবিজ্ঞানে শঙ্কুর অমূল্য অবদান। এছাড়া ছোটোখাটো অস্ত্র, অল্পস্বল্প শাস্তি দেবার জন্য যা ব্যবহৃত হবে তা হল স্নাফগান, যার এক গুলিতে 33 ঘন্টা পর্যন্ত হাঁচি হবে।

প্রফেসর শঙ্কুর আরেকটি আশ্চর্য আবিষ্কার যান্ত্রিক মানুষ রোবু। মাত্র তিনশো তেত্রিশ টাকা সাড়ে সাত আনায় শঙ্কুর ল্যাবরেটরির প্রধান সহকারী হয়ে ওঠে এই রোবু। একটু ট্যারা, সবসময় মুখে হাসি লেগে থাকা রোবু বাংলা, ইংরেজি, জার্মান, সংস্কৃত বিবিধ ভাষায় পারদর্শী। সুখ, দুঃখ অনুভব করতে সে পারে না ঠিকই, কিন্তু ব্যোমযাত্রীর ডায়েরিতে দেখা যায় রোবু বিপদ সংকেত পায়, ঠিক ভুল বিচার করতে পারে। ক্রমশ শেখানো কাজ বা শেখানো হিসেবের বাইরে সে চিন্তাশীল যন্ত্রমানব হয়ে ওঠে। গিরিডির মতো নির্জন জায়গায় বসে উশ্রীর ধারে প্রাতভ্রমণ করতে করতেই শঙ্কুর এই অসামান্য আবিষ্কার। তবে এধরনের কাজকে তিনি মানুষের সৃষ্টি বলে মনে করতে পারেন না। তাঁর মনে হয় সম্ভাবনাটা আগে থেকেই থাকে, হয়তো চিরকালই ছিল: মানুষ কেবল হয় বুদ্ধির জোরে না হয় ভাগ্যবলে সেই সম্ভাবনাগুলোর হদিস পেয়ে তাকে সেগুলোকে কাজে লাগিয়ো নেয়। অন্য আর পাঁচজন বিজ্ঞানীর থেকে এখানেই তিনি আলাদা, তাঁর খ্যাতির মোহ নেই, অর্থের লালসা নেই। জানার আগ্রহ এবং জীবনের প্রতি আশ্চর্য কৌতূহল তাঁকে সর্বক্ষণ ক্রিয়াশীল রেখেছে। যদিও সুইডিস অ্যাকাডেমি অফ সায়েন্স কর্তৃক তিনি সম্মানিত হন।

প্রতিবেশী অবিনাশ বাবুর সঙ্গে উশ্রীর তীরে তাঁর দেখা হয়। শঙ্কুর অত্যাশ্চর্য আবিষ্কার সম্পর্কে সবসময় তিনি সন্দিহান । অবিনাশবাবু আসলে সমস্ত বিজ্ঞানভীরু বাঙালির প্রতিনিধি হয়ে বিজ্ঞানী শঙ্কুর করুণার পাত্র হয়ে থেকে গেছেন। তাঁর নিত্যসঙ্গী প্রহ্লাদ আর বিড়াল নিউটন। নিউটনের স্বাস্থ্য ও আয়ুবৃদ্ধির জন্য শঙ্কু আবিষ্কার করেছেন ফিশ পিল। শঙ্কুর গবেষণাগারের আর এক আশ্চর্য বস্তু যন্ত্রমানব বিদুশেখর। বিধুশেখর, নিউটন আর প্রহ্লাদকে নিয়ে শঙ্কু মহাকাশ পর্যন্ত পাড়ি দিয়েছিলেন। শঙ্কুর আবিষ্কারের তালিকায় আঁহে অম্‌নিস্কোপ বা মাইক্রোসোনোগ্রাফ ও এজাতীয় অনেক গ্যাজেট, যার কোনোটাই কারখানায় তৈরি করা যায় না। এসবই মানুষের হাতের কাজ। সেই মানুষ একমেবাদ্বিতীয়ম্ ত্রিলোকেশ্বর শঙ্কু। আর তাই বোধহয় শঙ্কুর আবিষ্কারের জুড়ি সারা পৃথিবীতে খুঁজে পাওয়া যায় না।

এরই মধ্যে আছে সর্বরোগনাশক বড়িমিরাকিউরল, নিশ্চিহ্নাস্ত্র অ্যানাইহিলিন, সস্তায় আলো পাবার জন্য লুমিনিম্যাক্স, শীত-গ্রীষ্মে শরীরের তাপ নিয়ন্ত্রণের ট্যাবলেট এয়ার কন্ডিশনিং পিল, মঙ্গলে পাড়ি দেবার রকেট, পেট ভরানোর বড়ি বটিকা ইন্ডিকা; এরকম আরো অনেক কিছু। আবিষ্কারক হিসেবে শঙ্কু নিজেকে টমাস আলভা এডিসনের পরেই স্থান দেন।

শঙ্কু মঙ্গলে পা রেখেছেন। টাইম মেশিনে অশোকের সময়ে পৌঁছে তাঁর পশু চিকিৎসালয় ঘুরে এসেছেন। বিভিন্ন অভিযানে তার সঙ্গে থেকেছেন ইংল্যান্ডের জেরেমি সন্ডার্স এবং জার্মানির বিজ্ঞানী উইলহেলম ক্লোল। এই ক্লোল আবার প্রাচীনতন্ত্রে বিশ্বাস করেন। আধুনিক বিজ্ঞানের সঙ্গে প্রাচীন গুহ্য সহাবস্থানে শঙ্কুর বিশেষ অসুবিধা হয় না। কখনও সাহারার মরুভূমিতে, কখনো আফ্রিকার জঙ্গলে, কখনও সমুদ্রের মাঝখানে অচেনা দ্বীপে তিনি পৌঁছে গেছেন তাঁর বন্ধুদের সঙ্গে। শঙ্কুর ভ্রমণ তালিকায় কেবল পূর্ব-পশ্চিম ইউরোপ আছে তা নয়, শঙ্কু বাগদাদে গেছেন। সঙ্গে নিয়ে যান তাঁর অমনিস্কোপ যন্ত্র। তাতে টেলিস্কোপ, মাইক্রোস্কোপ এবং এক্সরে তিনটেরই কাজ চলে। বাগদাদই সেই শহর যে শহরের আশেপাশে প্রথম সভ্য মানুষ দেখা যায়। এই প্রসঙ্গে জানা যায় প্রাচ্য সভ্যতা বিশেষত এই আরব সভ্যতার বিজ্ঞান ও অন্যান্য আবিষ্কার বিষয়ে শঙ্কুর শ্রদ্ধা ও বিস্ময়। অনেক সময় নানান বিপদ থেকে তাঁকে রক্ষা করেছে আশ্চর্য ক্ষমতাবান মানুষ মাকড়দার নকুড় চন্দ্র বিশ্বাস। সাধারণ চেহারার মানুষ নকুড়বাবু, কিন্তু তিনি চোখের সামনে অন্য জায়গার লোক; অন্য জায়গার ঘটনা দেখতে পান। যেমন মার্কিন ক্রোড়পতির সিন্দুক খোলার নম্বর হঠাৎ করেই তিনি বলে ফেলতে পারেন। আগাম তিনি শঙ্কুকে সাও পাওলোর ঘটনা থেকে সতর্ক হতে বলেছিলেন।

নকুড়বাবুর সঙ্গে এল ডোরাডো খুঁজতে শঙ্কু, সন্ডার্স এবং ক্লোল সাও পাওলোতে যায়। এল ডোরাডো শুধু শহর নয়, পুরাকালে সূর্যের প্রতীক হিসেবে পূজিত ব্যক্তিকে এল ডোরাডো বলা হতো। এখানেই দেখা পাওয়া যাবে ব্রাজিলের উপজাতি চুকাহামাদের সঙ্গে । ক্যানো চেপে জিঙ্গু নদীতে ভ্রমণ, ব্রাজিলের জঙ্গলে অ্যানাকোন্ডার সাক্ষাৎ, নানা কীটপতঙ্গ পশুপাখি, পিরানহা মাছ, লানটানা ফুলের ঝোপ, বেরাকুডা মাছি— এসবই বর্ণনা করেছেন শঙ্কু। ব্রাজিলের এই জঙ্গল কেটে চাষের জমি বানানোর চেষ্টা, হাইওয়ে বানানোর চেষ্টা খুব শিগগিরই যে ব্রাজিলের অরণ্য সম্পদের বদল আনবে সে কথাও শঙ্কুর অগোচর থাকে না। আত্মভোলা বৈজ্ঞানিক হলেও বিভিন্ন দেশের মুনাফাকামী ব্যবসায়ী অথবা শাসকের সঙ্গে তাঁর বিরোধ এসব নিয়েই শুরু হয়। এমনকি সাম্রাজ্যবাদী শাসক ফ্যাসিস্ট হিটলার সম্পর্কে তাঁর মতামতও যথেষ্ট মূল্যবান। শঙ্কুর শত্রুরও তাই অভাব নেই। বিভিন্ন সময়ে তাঁকে বিপদে ফেলেছেন সুইজারল্যান্ড-এর বিজ্ঞানী হামবোল্ট বা ইতালির বিজ্ঞানী রন্ডি।

কী অদ্ভুতভাবে শঙ্কুই বাঙালিকে আলিবাবার গুহা দেখিয়েছেন—যা আরব্য রজনীর অসম্ভব কাহিনির মোড়ক ছেড়ে বিজ্ঞানীর বিস্ময়কর আবিষ্কারে পরিণত হয়েছে। শঙ্কু সেখানে আবিষ্কার করেছেন এক জাদু বাক্স, যে বাক্সের মধ্যে আছে কিছু যন্ত্রপাতি আর যার সাহায্যে দেখা গেল চলচ্চিত্র বা বায়োস্কোপ ।

বিজ্ঞান এবং যুক্তির পাশাপাশি পৃথিবীর প্রাচীন সাহিত্য, সংস্কৃতি, কিংবদন্তি, তন্ত্রমন্ত্র, অতিপ্রাকৃত ঘটনা, হিপনোটিজম, ক্লেয়ারভয়েন্স এই সব কিছুর প্রতিই শঙ্কুর সমান আগ্রহ। শঙ্কু বিশ্বাস করেন যে মানুষ এই মুহূর্তে যা বুঝতে বা ব্যাখ্যা করতে পারছে না কোনো একসময় তার অর্থ উদ্ভাসিত হতে পারে। এইভাবে ভাবলে শঙ্কুকে মনে হয় প্রাচীন সভ্যতায় আস্থাশীল একজন মানুষ। কেবলমাত্র পশ্চিমি জ্ঞানচর্চার ধারা বাদ দিয়ে সভ্যতার বিচিত্র স্বাদ নিতে যিনি রাজি

শঙ্কুর ২১ টি ডায়ারির মধ্যে এই জাতীয় বিভিন্ন অভিযানের ব্যাখ্যা বর্ণনা থেকে বোঝা যায়, শঙ্কু শুধু বিজ্ঞানী নন, চমৎকার লেখক। ডায়ারির ধরনে তিনি ভ্রমণকাহিনি, রহস্য-রোমাঞ্চ ও অ্যাডভেঞ্চারের বর্ণনায় সিদ্ধহস্ত ।

যে কোনো মুহূর্তে আমাদের সামনে যে আসতে পারে নানান বিস্ময় তা নিয়ে প্রফেসরের কোনো সংশয় ছিল না। অসীম শ্রদ্ধা এবং বিস্ময় শঙ্কুর জীবনে অপূর্ব বৈচিত্র্য এবং গভীরতা এনেছে। প্রাণীজগতের বা বাইরের জগতের প্রধান শত্রু যে মানুষ শঙ্কুর কাছে তাও স্পষ্ট হয়েছে। আশ্চর্যন্ত ‘ইয়ে’-কে ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করা হলো না বলে শঙ্কুর খেদ আছে ঠিকই কিন্তু তার আরেকটা মন বলছে মানুষের সব জেনে ফেলার লোভের একটা সীমা থাকা উচিত । এমন কিছু থাকুক যা মানুষের মনে প্রশ্নের উদ্রেক করতে পারে। বিস্ময় জাগিয়ে তুলতে পারে, বিভিন্ন ভৌগোলিক পরিবেশে শঙ্কুর অভিযানের আরেকটি বড়ো বিবরণ আছে একশৃঙ্গ অভিযানে। এই অভিযানে ইউনিকর্ন-এর কথা, খাম্পা দস্যু, উড়ন্ত লামার কথা আছে। আর আছে তিব্বত, সেখানকার ধুমসো লোমশ কুকুর। প্রাচীন গুম্ফা, রাক্ষসতাল হ্রদ বা মানস সরোবরের কথা। এই অভিযানে অবিনাশবাবু শঙ্কুর সঙ্গী আর এখানেই আছে মানুষের সেই অত্যাশ্চর্য আকাশে ওড়ার কাহিনি। এই উড্ডয়ন সূত্রের অপূর্ব বর্ণনা শঙ্কুর কলমের খোঁচায় অবিশ্বাস্য অথচ সম্ভাব্যতার গুণে প্রকাশিত হয়েছে। আসলে অনেক দেশে অনেক কাল ধরে যদি কোনো কিছুতে বিশ্বাস থাকে, তখন সেই বিশ্বাসের জোরেই কল্পনা বাস্তব রূপ নিতে পারে ।

মানুষের ওড়ার ক্ষমতা বা ইউনিকর্ন বা লামাদের আশ্চর্য জগতের থেকে বোধগম্য মনস্তাত্ত্বিক ব্যাখ্যা আর কীই বা হতে পারে ? এরকমই আরেকটি চমৎকার ডায়ারি কর্ভাসকে বর্ণনা করেছে। সেখানে আছে পাখি পড়ানো যন্ত্র অর্নিথপের কথা। অসম্ভব দক্ষতায় এই ডায়ারিতে তিনি কৌতুক সৃষ্টি করেছেন। পাখিকে দিয়েই সেই মজার কান্ড ঘটেছে।

এরকমই পাখির কথা বলা, বিচিত্র জন্তুর সমাহার, নানান অসম্ভব ক্রিয়াকলাপ, প্রায় জাদু বস্তুর মতো কোনো কোনো প্রাচীন দ্রব্যের আবিষ্কার শঙ্কুর ডায়ারিকে এক উদ্ভট জগতের আঁতুড়ঘর করে তুলেছে। সুলেখক শঙ্কু ধীরে ধীরে গড়ে তুলেছেন এক বিশ্বাসযোগ্য আজগুবি আজব দুনিয়া, বুদ্ধিতে যার ব্যাখ্যা চলে না। এই অসম্ভবের দুনিয়া বর্ণনার সময় তিনি ব্যবহার করেছেন এক বৈজ্ঞানিক পরিভাষা, এক এমন যুক্তিক্রম যা শঙ্কুর সমস্ত অ্যাবসার্ডিটিকে এক বাস্তব রূপ দিয়েছে। বিশ্বাস করা যায় না তবু আমাদের চোখের সামনে জ্যান্ত হয়ে থাকে খর্বকায় বিরল কেশ, তীক্ষ্ণ চাহনির এক বৃদ্ধ যিনি পঁচাত্তর বছর বয়সেও প্রশান্ত মহাসাগরের কোনো একদ্বীপে হয়তো অভিযানে বেরিয়েছিলেন, যাঁর জীবনের শুরুটা আমরা জানি শেষটা জানি না ।